শিরোনামহীন ব্যান্ড দল

শিরোনামহীন ব্যান্ড দল : শিরোনামহীন ১৯৯৬ সালে গঠিত ঢাকা ভিত্তিক বাংলা রক ব্যান্ড। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে ঢাকার আন্ডারগ্রাউন্ড সঙ্গীত থেকে উঠে এসে প্রোগ্রেসিভ রক, সাইকেডেলিক রক এবং লোক ধাঁচের সঙ্গীতের জন্য তারা খ্যাতি অর্জন করে। গানের দর্শন, সুর এবং জনবহুল সরাসরি পরিবেশনার জন্য দলটি বাংলা প্রোগ্রেসিভ রক ধারার শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ডগুলির একটি হয়ে ওঠে।

শিরোনামহীন ব্যান্ড দল
শিরোনামহীন লোগো [ Shironamhin Logo ]

শিরোনামহীন ব্যান্ড দল

শিরোনামহীন ১৯৯৬ সালে স্থাপত্য প্রকৌশল শিক্ষার্থী জিয়াউর রহমান জিয়া (বেস), জুয়েল (গিটার) ও বুলবুল হাসান (কণ্ঠ)- এই তিনজন তরুণের সমন্বয়ে গঠিত হয়। ২০০২ সালে চতুর্থ সদস্য হিসেবে কণ্ঠশিল্পী তানজির তুহিন দলে যোগ দেন। জিয়া, ব্যান্ডের প্রাথমিক গীতিকার এবং ধারণাগত নেতা হয়ে ওঠে এবং ২০০৪ সালে তাদের প্রথম অ্যালবাম জাহাজী প্রকাশ করে। পরবর্তীতে তারা সমালোচনাপূর্ণ এবং বাণিজ্যিকভাবে সফল অ্যালবাম ইচ্ছে ঘুড়ি (২০০৬), বন্ধ জানালা (২০০৯), রবীন্দ্রনাথ (২০১০) এবং শিরোনামহীন (২০১৩) প্রকাশ করে। তাদের “হাসিমুখ” (২০০৪) গানটি মুক্তির পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়াও তাদের জনপ্রিয় গানের মধ্যে “পাখি” ২০০৬ সালে সেরা গান বিভাগে সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক পুরস্কার লাভ করে। ব্যান্ডটি এছাড়াও দুটি চলচ্চিত্রের স্কোর পরিচালনা করেছে।

শিরোনামহীন ব্যান্ডদলের সদস্যদের গ্রুপ ছবি [ Shironamhin Band Members Group Photo ]
শিরোনামহীন ব্যান্ডদলের সদস্যদের গ্রুপ ছবি [ Shironamhin Band Members Group Photo ]
ব্যক্তিগত অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে ২০১৭ সালে তুহিন শিরোনামহীন ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে নতুন ভোকাল হিসেবে শেখ ইশতিয়াক ব্যান্ডে যোগ দেন। এরপর তারা “জাদুকর” (২০১৭), “বোহেমিয়ান” (২০১৮), “বারুদ সমুদ্র” (২০১৮), “এই অবেলায়” (২০১৯), “ক্যাফেটেরিয়া পেরিয়ে” (২০২০) গানগুলি প্রকাশ করে। ২০১০ সালে শিরোনামহীন ব্যান্ডের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রকাশিত হয়। ২০০৮ সালের ১ আগস্ট শিরোনামহীন বাংলাদেশ মিউজিকাল ব্যান্ড সমিতির (বামবা) সদস্যপদ লাভ করে।

শিরোনামহীন এর ইতিহাস:

১৯৯৬–২০০৪: প্রারম্ভিক বছর:

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) স্থাপত্য প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নকালে জুয়েলের সঙ্গে পরিচত ছিলেন জিয়াউর রহমান জিয়া। ইতোপূর্বে জিয়া ১৯৯২ গঠিত থ্র্যাশোল্ড নামের একটি থ্রাশ মেটাল ঘরানার ব্যান্ডে বাজাতেন। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি বুলবুল হাসানের সাথে জিয়ার সাক্ষাত ঘটে। বুলবুল সে সময় ছায়ানটে অধ্যয়নরত। ১৯৯৬ সালে তারা তিনজন মিলে একটি ব্যান্ড গঠন করেন। মূল কণ্ঠে বুলবুল এবং গিটারে জুয়েল ও জিয়া মিলে প্রথমদিকে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনা, টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, হাকিম চত্বর, আর্টস ক্যাফেটেরিয়া এবং কাছাকাছি জনাকীর্ণ স্থানে ঘরোয়া পরিবেশনে অংশ নিতে থাকে। শুরু থেকেই গান লেখা আর সুর করতেন জিয়া। প্রাথমিকভাবে তারা প্রায় পঞ্চাশটি গান তৈরি করে।

শিরোনামহীন ব্যান্ডদলের সদস্যদের গ্রুপ ছবি [ Shironamhin Band Members Group Photo ]
শিরোনামহীন ব্যান্ডদলের সদস্যদের গ্রুপ ছবি [ Shironamhin Band Members Group Photo ]
১৯৯৬ সালের পহেলা বৈশাখে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে পদাতিক নাট্য সংসদের আয়োজনে শিরোনামহীন নামে তারা প্রথম মঞ্চে পরিবশেন করে। শিক্ষাঙ্গণভিত্তিক প্রাথমিক জনপ্রিয়তা লাভের পর তারা একের পর এক পরিবেশনের আমন্ত্রণ পেতে শুরু করে। এর কিছুদিন পর চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুলতলায় পরিবেশন করে শিরোনামহীন। সে সময়ে ব্যান্ডটির বাদ্যযন্ত্রেও পরিবর্তন আসে। তারা পরিবেশনায় প্লাগ্ড গিটার, সরোদ ও ড্রাম ব্যবহার শুরু করে। সে সময়ের মঞ্চে পরিবেশনকৃত সব গানই তাদের নিজেদের রচিত ছিল বলে শ্রুোতাদের আগ্রহের বিষয় হয়ে ওঠে। তাদের ভিন্নধর্মী সঙ্গীতশৈলী ও গানের কথা সেসময় তাদের খ্যাতি অর্জনে সহায়তা করে।

রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলগীতিতে পারদর্শী তাদের তৎকালীন ভোকাল বুলবুল ব্যান্ডের সাথে নিজেকে মানিয়ে তুলতে না পারায় ২০০০ সালে দল ত্যাগ করেন। ব্যান্ডে ভোকাল হিসেবে যোগ দেন মহিন। এরপর সম্পূর্ণ বাদ্রযন্ত্র সমন্বয়ে শিরোনামহীন পরিবেশনা শুরু করে। একই বছর “স্টার সার্চ: বেনসন অ্যান্ড হেজেস” প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয় শিরোনামহীন। অন্যদিকে মহিন দেশ ত্যাগ করায়, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে নতুন ভোকাল হিসেবে মহিনের স্থলাভিষিক্ত হন তানজির তুহিন। জিয়া এবং তুহিন দুজনই সে সময়ে বুয়েটে সহপাঠী ছিলেন। ২০০৩ সালে ফারহান করিম (সরোদ) ও ইয়াসির তুষার (গিটার) ও কাজী আহমাদ শাফিন (ড্রাম) দলে যোগদান করেন।

২০০৫–২০১৭: অবস্থান্তর ও সাফল্য:

২০০৫ সালের দিকে শিরোনামহীন বিভিন্ন সঙ্গীত উপাদান নিয়ে কাজ করতে থাকে। এসময়ে তারা মিক্স-অ্যালবামে নিজেদের সংকলন শুরু করে। ২০০৬ সালে জি-সিরিজের ব্যানারে প্রকাশিত স্বপ্নচূড়া ২ অ্যালবামে তাদের “গোধূলী” গানটি প্রকাশিত হয়।

শিরোনামহীন এর এ্যলবাম:

জাহাজী (২০০৪):

নতুন লাইনআপে প্রায় বছর তিনেক কাজের পর এবং ব্যান্ড গঠনের প্রায় আট বছর পর শিরোনামহীন তাদের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করে। ২০০৩ ডিসেম্বরে র‍্যাবিট কমিউনিকেশন স্টুডিওতে শিরোনামহীন তাদের কিছু গান রেকর্ড করে। বিভিন্ন সেশনে তারা গানগুলি রেকর্ডের কাজ করেছিল। একটি সেশনে তারা “শুভ্র রঙিন”, “শহরের কথা” এবং “হাসিমুখ” গানগুলি রেকর্ড করে। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে জি-সিরিজ থেকে জাহাজী অ্যালবামটি মুক্তি পায়। অ্যালবামটিতে শিরোনাম ট্র্যাকসহ ১১টি গান সংকলিত হয়েছে। সাতটি গান এককভাবে রচনা করেছেন জিয়া। অন্যদিকে তুহিন এবং ফারহান দুইটি করে যথাক্রমে “নদী” ও “হয় না”, “নিশ্চুপ আঁধার” ও “ঘুম” গানগুলি রচনা করেন। ব্যান্ডের একমাত্র অ্যালবাম হিসেবে জাহাজি প্রাথমিকভাবে অধিকাংশ রেকর্ড লেবেল সংস্থা কর্তৃক প্রকাশে অস্বীকৃত এবং প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

জাহাজী ২০০৪ শিরোনামহীন ব্যান্ড দল

 

নগরজীবন এবং জীবনসংগ্রাম মূলত অ্যালবামটির ভিত্তি, যার প্রকাশ রয়েছে শিরোনাম ট্র্যাকে। যুবক নাবিকের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনচিত্র সন্ধানের উপাদানগুলি চিত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে অ্যলবামের সুর ও গানের কথায়। সাংস্কৃতিক আগ্রহ, জনাকীর্ণ নগরদৃশ্য, ব্যস্ত ট্রাফিকের জীবন ইত্যাদি রূপক এবং ঘটনাগুলি অ্যালবামটির উপজীব্য হয়ে উঠেছে। মূলত আধুনিক শহুরে মানুষের জীবনবোধ এবং নিত্য সংগ্রামচিত্র বিবৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে অ্যালবামটিতে। মুক্তির পর অ্যালবামটি প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছিল। অ্যালবামের সাইকেডালিক রক ঘরানার “হাসিমুখ” গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বলা যায় “হাসিমুখ” গানটাই শিরোনামহীনকে পরিচিতি এনে দিয়েছে। জিয়া ১৯৯৮ সালে গানটি রচনা ও সুর করেছিলেন।

টেলিভিশন বিজ্ঞাপনেও গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। অ্যালবামের প্রচ্ছদে একজন স্যুট-টাই পরিহিত লোকের লাফ দেয়ার ছবি রয়েছে, যেই লোকটি রূপক অর্থে একজন জাহাজী। অ্যালবামটি মুক্তির কিছুদিন পরই পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান দলটির সরোদবাদক ফারহান। পরে জিয়া ও শাফিন সরোদ বাজানো শুরু করেন।

ইচ্ছে ঘুড়ি (২০০৬):

২০০৬ সালে, শিরোনামহীন তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম ইচ্ছে ঘুড়ি রেকর্ডের জন্য জি-সিরিজ স্টুডিওসে ফিরে আসে। অ্যালবামটিতে তারা কিছু নিরীক্ষা করার চেষ্টা করেছিল। সরাসরি পরিবেশনার জন্য উপযুক্ত রচনাগুলিতে পরিপক্কতা আনতে নিজস্ব শৈলী ঠিক করার প্রচেষ্টা করে তারা। গানের কথায় শহুরে সংকট প্রকাশের চেষ্টা রয়েছে যদিও তারা কোনও মন্তব্য বা পরামর্শ প্রদানের চেষ্টা করেননি। “ক্যাফেটেরিয়া” গানটি স্বতন্ত্র কোণ থেকে বিচার করার গল্প। এটি এমন এক মুহুর্তের উপর ভিত্তি করে তৈরি যে কেউ তার ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ায় প্রবেশ করে এবং আড্ডায় চারপাশের শব্দ এবং ধোঁয়ার মধ্যে দুটি নীরব চোখ অনুভব করে। মূলত এটি নস্টালজিক গান। পরবর্তীতে ২০২০ সালে “ক্যাফেটেরিয়া পেরিয়ে” শিরোনামে গানটির একটি সিক্যুয়েল প্রকাশিত হয়। এছাড়াও অ্যালবামের জনপ্রিয় গানের মধ্যে “পাখি” ২০০৬ সালে সেরা গান বিভাগে সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক পুরস্কার লাভ করে।

বন্ধ জানালা (২০০৯):

২০০৮ সালে নতুন সদস্য হিসেবে রাজীব (কিবোর্ড) যোগ দেয়ার পর পর তারা বন্ধ জানালা অ্যালবামের কাজ শুরু করে। ২০০৯ সালে জি-সিরিজ এবং অগ্নিবীণার প্রযোজনায় অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়। অ্যালবামটিতে শিরোনাম ট্যাকসহ ১০টি গান সংকলিত হয়েছে। অ্যালবামটিতে এসরাজ, বোধন (আইরিশ উপকরণ), ব্যাঞ্জো, স্যাক্সোফোন এবং ট্রাম্পেটের ব্যবহার রয়েছে যা মূলধারার পপ বা রক সঙ্গীতে প্রায়শই ব্যবহৃত হয় না। সেদিক থেকে বন্ধ জানালা শিরোনামহীনের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছিল। অ্যালবামটি প্রাণবন্ত সুরসংযোজনে সমৃদ্ধ ছিল।

গীতিধর্মীর দিক থেকে শিরোনামহীন তাদের ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত শহুরে জীবনধারা ও তার কিছু বড় দৃষ্টিকোণ নিয়ে, সেই সাথে ঐতিহাসিক ঘটনা বা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে চেয়েছে। তাদের “বাস স্টপেজ” গানটি একটি বাস স্টপের চারপাশে নিয়মিত জীবনচিত্রের ওপর ভিত্তি করে। যার একটি চরিত্র তার স্বপ্নকে কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তাই জিয়া লিখেছে, “কিছু স্বপ্ন বিক্রি করে যারা”।

রবীন্দ্রনাথ (২০১০)

২০১০ সালে তুষারের পরিবর্তে গিটারবাদক হিসেবে দিয়াত খান ব্যান্ডে যোগ দেন। বন্ধ জানালা অ্যালবামের সাফল্যের পর শিরোনামহীন ভিন্নধারায় তাদের চতুর্থ অ্যালবাম প্রকাশের ঝুঁকি নেয়। বাঙ্গালি বহুবিদ্যাবিশারদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১০ সালে প্রকাশিত অ্যালবামের নাম রবীন্দ্রনাথ, যেটি মূলত দলটির রক ধারায় রবীন্দ্রসঙ্গীত সংকলন। একইসাথে বাংলাদেশে কোনো ব্যান্ডের এটিই ছিল প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত অ্যালাবাম। বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে অধ্যয়নকালে তুহিন রবীন্দ্রসঙ্গীতে তামিল নিয়েছিলেন। ফলে মূলত তুহিনের আগ্রহ এবং পরিকল্পনায় অ্যালবামটির কাজ শুরু হয়। শিরোনামহীন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাঙালি সংস্কৃতির একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে মনে করে, বাঙালি হিসাবে সংস্কৃতি বিষয়ে ন্যূনতম সংবেদনশীল যে কারো রবীন্দ্রনাথকে জানা উচিত।

রবীন্দ্রনাথ (২০১০) অ্যালবাম প্রচ্ছদের সম্পাদিত ছবিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দলের সদস্যরা
রবীন্দ্রনাথ (২০১০) অ্যালবাম প্রচ্ছদের সম্পাদিত ছবিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দলের সদস্যরা

অ্যালবামটিতে তারা ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানায়। রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান থেকে শুরু করে পশ্চিমা ধাঁচের গানও স্থান পেয়েছে অ্যালবামটি। তুহিনের মতে, রবীন্দ্রসঙ্গীতের গানের কথায় বৈষ্ণব ও উপনিষদিক আদর্শের সমন্বয়ের পাশাপাশি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত, লোকসঙ্গীত ও পাশ্চাত্য সুরের ত্রিবেণীসংগম ঘটেছে। জিয়া মনে করেন, শিরোনামহীনের অনেক ভক্ত, বিশেষত কিশোর-কিশোরীরা রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাথে তেমন পরিচিত নন। ফলে এটি তরুণ শ্রোতাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর প্রয়াস।

রবীন্দ্রনাথ রচিত ২২১২টি গানের মধ্য থেকে কালজয়ী নয়টি গান অ্যালবামটিতে যুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্র স্বরলিপির মূল কথা ও সুর ঠিক রাখতে ৬৪টি খণ্ডে প্রকাশিত স্বরবিতানের সহায়তায় নেয় তারা। অ্যালবামের সঙ্গীত রচনায় ধ্রুপদী, বাউল, লোক, র্কীতন, ভাবানুবাদ এমনকি পশ্চিমা সঙ্গীতের মিশ্রণ ঘটেছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলোর সুরোরোপে তারা দেশি-বিদেশি ৩৯টি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে। এই অ্যালবামের জন্য তারা রেইনমেকার, দারবুকা, টিনের বাঁশি এবং বোধ্রান ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে। রবীন্দ্রগবেষক ও ছায়ানটের শিল্পীদের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে অ্যালবামটির কাজ শেষ হওয়ার প্রায় চার মাস পরও দলটি পছন্দসই প্রকাশনা সংস্থা পায় নি। অ্যালবামের প্রচ্ছদেচিত্রে রবীন্দ্রনাথের চারপাশে দলটির সদস্যরা শিষ্য হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। মূলত এটি ছিল রক ধারায় ধ্রপদী সঙ্গীতের পরিবেশন। প্রকাশের পর অ্যালবামটি বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ করেছিল।

শিরোনামহীন (২০১৩):

রবীন্দ্রনাথ প্রকল্পের পর ২০১০ সাল থেকে শিরোনামহীন নতুন অ্যালবামের গান নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১১ সালে রাজীবের পরিবর্তে রাসেল কবির (কিবোর্ড) ব্যান্ডে যোগ দেন। ১৭ বছরের সঙ্গীত সফরের পরে শিরোনামহীন ২০১৩ সালে তাদের প্রথম স্ব-শিরোনাম এবং পঞ্চম অ্যালবাম “শিরোনামহীন” প্রকাশ করে। ২৫টি গানের মধ্য থেকে নির্বাচিত ১০টি গান অ্যালবামটিতে প্রকাশিত হয়েছে। গানগুলি ঢাকার বাংলামোটরের ইনকার্সন মিউজিকে রেকর্ড করা হয়। অ্যালবামের “আবার হাসিমুখ” গানটি তাদের পূর্রবর্তী “হাসিমুখ” গানের একটি সংস্করণ।

তানিম রহমান অংশুর পরিচালনায় “আবার হাসিমুখ” গানটির একটি মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে অভিনয় করেছেন ২০০৭ সালের মিস বাংলাদেশ বিজয়ী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। অ্যালবামটির মাধ্যমে শিরোনামহীন অতীতের জানালার মাধ্যমে নতুন আলোকে আমন্ত্রণ জানাতে তাদের স্বীকারোক্তি, চাহিদা, ক্রোধ, আশা এবং প্রত্যাশা সংকলনের প্রচেষ্টা চালায়। গীতিকথার দৃষ্টিকোণ থেকে অ্যালবামটি নেতিবাচক জীবনযাপনের ইতিবাচক দিক বর্ণনা করে। সাঙ্গীতিকভাবে শিরোনামহীন বেহালা, চেলো, পাবলিক ক্লাসিক অর্কেস্ট্রেশনে রক গিটার, বেস এবং ড্রামের সাথে মিশ্রিত কনট্রাবাস বিভাগের উপর ভিত্তি করে সঙ্গীত রচনা করে।

তুহিনের পরিকল্পনায় জিয়ার নকশাকৃত শিরোনামহীনের সর্বশেষ অ্যালবাম শিরোনামহীন (২০১৩)
তুহিনের পরিকল্পনায় জিয়ার নকশাকৃত শিরোনামহীনের সর্বশেষ অ্যালবাম শিরোনামহীন (২০১৩)

প্রথমবারের মত দলটি তাদের কোনো অ্যালবামের সংগ্রাহক সংস্করণ প্রকাশ করে। সংস্করণে যুক্ত হয়েছে সিডি, ও কাপড়ের মলাটে বাধাইকৃত বই যুক্ত করা হয়ছে। যেখানে গানের লিরিক, লিরিকের পটভূমিসহ প্রাসঙ্গিক তথ্য সংকলিত হয়েছে। অ্যালবামটিতে শিরোনামহীন দলের সদস্য এবং সাথে জড়িত ব্যক্তিদের স্মরণ করিয়েছেন, যারা অন্তত একবার হলেও শিরোনামহীনের হয়ে কাজ করেছিল। তানজির তুহিনের পরিকল্পনায় জিয়া নিজেই অ্যালবাম প্রচ্ছদ নকশা করেছেন। ২০১৪ সালে ১৪ এপ্রিল লেজার ভিশন অ্যালবামটির একটি কালেক্টরস সংস্করণ প্রকাশ হয়।

 

শিরোনামহীন এর গান:

1 thought on “শিরোনামহীন ব্যান্ড দল”

Leave a Comment