মনমোহন দত্ত । বাংলাদেশী গীতিকার, সুরকার ও গায়ক

মনমোহন দত্ত ছিলেন মলয়া সংগীতের জনক, মরমী সাধক, কবি, বাউল, সমাজ সংস্কারক ও অসংখ্য অসাধারণ গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। তিনি মনোমোহন সাধু নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। মনমোহন দত্তের লেখা গানগুলো সুর দিয়েছেন ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ এর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা আফতাবউদ্দিন খাঁ

 

মনমোহন দত্ত । বাংলাদেশী গীতিকার, সুরকার ও গায়ক

মনমোহন দত্ত । বাংলাদেশী গীতিকার, সুরকার ও গায়ক

জন্ম ও শিক্ষা

১২৮৪ বঙ্গাব্দের (১৮৭৭) ১০ মাঘ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর থানার সাতমোড়া গ্রামে মনমোহন দত্তর জন্ম। পিতা পদ্মনাথ দত্ত পেশায় ছিলেন একজন কবিরাজ। গ্রামের রামজীবন চক্রবর্তীর পাঠশালা থেকে ছাত্রবৃত্তি পাস করে মনোমোহন মুরাদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু অর্থাভাবে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি তিন বছর (১৮৯৬-১৮৯৯) মোক্তারি পড়েন।

সঙ্গীত জীবন

আঠারো বছর বয়সে মনমোহন দত্ত কালিকচ্ছ গ্রামের সর্বধর্মসমন্বয়বাদী সাধক আনন্দস্বামীর সাহচর্যে থেকে সংসারের প্রতি বিরাগী হয়ে ওঠেন। অতঃপর চট্টগ্রাম মাইজভান্ডারের পীর মাওলানা আহমদউল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে তিনি তাঁর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। মাইজভান্ডারের পরিবেশ তাঁকে অধ্যাত্মসঙ্গীত রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। তিনি এ ধারায় গান রচনা করে সাধু ও সজ্জন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা ৮৫০।

মনমোহন দত্ত নিয়মিত কুরআন ও বাইবেল পড়তেন; বেদ-বেদান্তেও তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল। তাঁর গানের একটি উক্তি হলো: ‘কোরান পুরান আদি বাইবেল কি বেদ, সবে ফুঁকারিয়া কয়, তার অবিচ্ছেদ।’ তিনি গুরুর নামে আনন্দাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন; সেখানে প্রতিরাতে জলসা হতো। পরবর্তীকালে মনোমোহনের জন্মোৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর ১০ মাঘ ভক্তরা তাঁর গান পরিবেশন করতেন। তাঁর একমাত্র সন্তান সুধীরচন্দ্র দত্ত আশ্রমের সার্বিক তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

 

Google News Channel Logo

 

 

মনোমোহনের শিষ্যবর্গের মধ্যে খ্যাতনামা সুরকার আফতাবউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁ, নিশিকান্ত সেন ও লবচন্দ্র পালের নাম উল্লেখযোগ্য। আফতাবউদ্দিন মনোমোহনের গানে সুরারোপ করেন। মনোমোহনের প্রথম সঙ্গীত-সংকলন মলয়া (২ খন্ড); অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে পথিক, পাথেয়, কথামৃত, যোগপ্রণালী, খনি ইত্যাদি। ১৩১৬ বঙ্গাব্দের (১৯০৯) ২০ আশ্বিন তিনি পরলোক গমন করেন এবং তাঁর ইচ্ছানুযায়ী লাশ কবর দেওয়া হয়।

সঙ্গীত সাধনা

মনমোহন দত্তের চিন্তাভাবনার পরিচয় তার গানেই পাওয়া যায় । সমকালীন নানা কুসংস্কার, সামাজিক বিভেদ, সাম্প্রদায়িকতাসহ বিভিন্ন কুপ্রথার বিরুদ্ধে তিনি গানের মাধ্যমে প্রতিবাদ তুলে ধরেন। তার গানে স্রষ্টা ও সৃষ্টির অলৌকিক সর্ম্পকও খুব সাবলীলভাবে ফুটে উঠে। তার গান নিয়ে শিল্পকলা একাডেমী, জাতীয় নাট্যশালাসহ দেশের বিভিন্ন শীর্ষ স্থানীয় সংস্থা বিভিন্ন সময় গবেষণাসহ স্মরণনভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামের মাইজভান্ডারের অনুসারীরা মনমোহনের ভাব সঙ্গীতের দ্বারা বেশ প্রভাবিত। তার স্বল্প জীবনকালে প্রায় হাজার খানেক গান, কবিতা এবং আধ্যাত্মিক সাধন প্রণালী এবং মনুষত্ত্ব অর্জনের পথের দিশা সংক্রান্ত গান লিখে গেছেন।

মনমোহন দত্ত । বাংলাদেশী গীতিকার, সুরকার ও গায়ক

পরিবার

ছয়ফুল্লাকান্দি গ্রামের সাধ্বী সৌধামনি দত্তের সাথে ১৩০৮ সনের ২৮শে ভাদ্র সোমবার মনমোহন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে একটি মাত্র সন্তান ছিল, নাম শ্রী সুধীরচন্দ্র দত্ত ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment