
ডাগর ঘরানা [ Dagar Gharana ]: ‘ডাগর ঘরানা’ হচ্ছে একটি প্রাচীন ধ্রুপদিয়া ঘরানা। কথিত রয়েছে ডাগর গ্রাম নিবাসী ধ্রুপদ গায়ক বৃজচন্দ্র ও হরিদাস হচ্ছেন এই ঘরানার প্রবর্তক। তবে অষ্টাদশ শতাব্দীর খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ বহরম খাঁ এবং তাঁর পিতার গায়নশৈলীতেই এই ধারা পরিলক্ষিত হয়। সংগীত-গবেষক ও গুণীজনদের অনেকেই বলেন, বর্তমানে ডাগর-ঘরানা বলতে যা বোঝায় প্রকৃতপক্ষে তার শুভসূচনা হয় ওস্তাদ বহরম খাঁ সাহেবের সংগীতনৈপুণ্য থেকেই। এই ঘরানার সংগীতশৈলী প্রথমে জয়পুর এবং পরে উদয়পুরকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়।

প্রাচীন ‘শুদ্ধাগীতি’র গায়কি এবং ধারার সঙ্গে ডাগর-ঘরানার বিশেষ মিল পরিলক্ষিত হয়। এই ঘরানার শ্রেষ্ঠ ধারক ও বাহক ছিলেন তৎকালীন সংগীতসমাজের অন্যতম কলাকার ওস্তাদ নাসিরউদ্দিন। ডাগর-ঘরানার ধ্রুপদ অত্যন্ত শাস্ত্রবদ্ধ, ভক্তিপূর্ণ ও গভীর রসাপুত। এতে বায়ান্ন প্রকার অলংকারের ব্যবহার রয়েছে বলে জানা যায়। এই ঘরানায় বীণাবাদন ও ধ্রুপদ গানের যুগলবন্দি পরিবেশন অত্যন্ত প্রচলিত একটি রীতি।
ওস্তাদ নাসিরউদ্দিনের মাধ্যমেই বাংলা গানের আসরে ডাগর-ঘরানার সূত্রপাত ও প্রচলন শুরু হয়। তাঁর স্বনামধন্য দুই পুত্র নাসির মঈনউদ্দিন ডাগর ও নাসির আমিনউদ্দিন ডাগর এই ঘরানার বিশেষ খ্যাতিমান শিল্পী। নিজস্ব সংগীতপ্রতিভা আর ডাগর-ঘরানার গায়নশৈলীর গুণে বিশ্বের সংগীতপ্রেমী দর্শক-শ্রোতার কাছে তাঁরা ‘ডাগর ব্রাদার্স’ নামে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁদের অসাধারণ সংগীতনৈপুণ্যের কারণে এই ঘরানার প্রতি সংগীতরসিক ও গুণীজনদের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষিত হয়।
পিতার মাধ্যমে ডাগর ঘরানার যেমন প্রচার ও প্রসার ঘটে, ঠিক তেমনি পুত্র নাসির আমিনউদ্দিন ডাগরের মাধ্যমে তা আরো বেশি সম্প্রসারিত হয়।
ডাগর ঘরানার বৈশিষ্ট্য [ Speciality of Dagar Gharana ]:
- আড়ম্বরবিহীন তবে মধুর রূপে গান পরিবেশন
- অলংকার, মিড় ও গমকের ব্যবহার না করা এবং
- গানের চলনে সরলতা
আরও দেখুন:
গীত ঘরানা, কণ্ঠশিল্পী বা গানের ঘরানা [ সঙ্গীতের ঘরানা ] Vocal Gharana of Music